নিজস্ব প্রতিবেদক :: একদিন পরেই ঈদ। অনেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। সবকিছুর মতো ঈদবাজারেও সেই ব্যস্ততার প্রভাব পড়েছে। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করছেন। যদিও বিপণীবিতানগুলোতে আগের সেই সুদিন নেই। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ধুম নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরও করোনার প্রভাব রয়েছে সবখানে। অন্যদিকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে কোনো কোনো জায়গায় মানা হলেও কিছু কিছু জায়গায় বিধি নিষেধ মানা হচ্ছে না। ফলে ঈদের আনন্দের পরের দিনগুলো নিয়ে আতঙ্কটা থেকেই যাচ্ছে। অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানুষকে বুঝানো যাচ্ছে না।
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। মাত্র একদিন পর আকাশের এক কোণে হাসবে বাঁকা চাঁদ। করোনার মধ্যে দ্বিতীয় ঈদ উদযাপন করবে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ। তবে ঈদ ঘনিয়ে এলেও অন্যবছরের চিত্র নেই দোকানগুলোতে। করোনার প্রভাব পশুর হাটের মতো ঈদের পোশাকেও পড়েছে। শহরের সব বিপণীবিতান, ফ্যাশন হাউস খোলা থাকলেও অন্যবছরের মতো শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ধুম নেই কোথাও। নেই স্বত:স্ফূর্ত উৎসাহ উদ্দীপনা। ঘরে ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। তারপরও কমবেশি যারা ব্যবসা করছেন তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব কিংবা করোনা সচেতনতার বিষয়টি উপেক্ষিত।
গতকাল বুধবার নগরীর বেশ কয়েকটি বিপণীবিতান ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। সব বিপণীবিতান কিংবা ফ্যাশন হাউসে কম-বেশি ক্রেতা আসা-যাওয়া করছেন। পরিবার পরিজন নিয়েও অনেকে কেনাকাটা করছেন। পছন্দের পোশাকের জন্য দোকান থেকে দোকানে ছুটছেন। করোনার আগের বছরগুলোতে অধিকাংশ পোশাকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য নায়ক-নায়িকা কিংবা বিখ্যাত ব্যক্তির নামে বাজারে অনেক পোশাক আসতো। ঈদের আগ থেকে সেই নামের পোশাক কেনার জন্য অনেক তরুণ-তরুণী কিংবা অভিভাবকরা ভিড় করতেন। কাপড় কেনার পর অনেকে দর্জিবাড়ি গিয়ে ভীড় জমাতেন। এবার অবশ্য সেই দৃশ্য চোখে পড়েনি। করোনা অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। যদিও মানুষের সচেতনতার বিষয়টি অনেককে হতাশ করেছে। কেনাকাটা করতে আসা অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেননি। পরিবারের একজন মানলে তিনজন মানছেন না। অনেক মা-বাবার মুখে মাস্ক থাকলেও তাদের সাথে আসা সন্তানের মুখে মাস্ক নেই। ক্রেতাদের মতো বিক্রেতাদের মধ্যেও সচেতনতার বিষয়টি লক্ষ করা যায়নি। অধিকাংশ বিক্রেতারাও এ ব্যাপারে ক্রেতাদের উৎসাহিত করছেন না। অথচ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জীবাণুনাশক ব্যবহার করা, মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করাসহ মোট আট শর্ত দিয়ে সরকার সীমিত পরিসরে বেচাকেনার অনুমতি দিয়েছে। অনেক বিপণীবিতানে এসবের একটিও মানা হচ্ছে না। অবশ্য কিছু বিপণীবিতানের সামনে জীবণুমুক্ত টানেল টাঙিয়ে রেখেই ব্যবসায়ীরা দায়মুক্ত হয়েছেন।
জিন্দাবাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মিরাবাজার এলাকার আশরাফ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মানুষ যখন দু:শ্চিন্তায় সেই মুহূর্তে আমাদের মধ্যে এসেছে আরেকটি ঈদ। দোকানগুলোতে ঢুকলে মনে হবে দেশে করোনা বলতে কিছুই নেই। দেশে-বিদেশের সব সংস্থা করোনার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলছে। তবে কারও মাঝে সেই বিধি-নিষেধের বালাই নেই।
অবশ্য অভিজাত ফ্যাশন হাউসে কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। নয়াসড়কের মাহা ফ্যাশনের কর্ণধার মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম জানান, ‘অন্যবছর কোরবানী ঈদে যেরকম বেচাকেনা হয় এবছর তেমন নেই। তারপরও আমরা সরকারি বিধি-নিষেধের ব্যাপারে সচেতন। মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। যাদের সাথে মাস্ক নেই আমাদের পক্ষ থেকে সেই ক্রেতাকে মাস্ক পরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সামাজিক সচেতনতার ব্যাপারে আমরা মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি।’ বেলা ১২টার দিকে উপচেপড়া ভিড় ছিল হাসান মার্কেটের কিছু দোকানে। কিন্তু সেখানে বিধি-নিষেধের বালাই ছিল না অনেকের মধ্যে। অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতারা কেউ সামাজিক দূরত্বের বিধি-নিষেধ মানছেন না। কেউ সচেতন নয়, আমরা কি করব?
আল হামরা শপিং সিটি ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. ইরশাদ আলী জানান, ব্যবসা খারাপ হচ্ছে না। তবে অন্যবছরের চেয়ে কম। করোনার প্রভাব সকল ক্ষেত্রে পড়েছে। তিনি বলেন, কিছু ক্রেতার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলেও অধিকাংশ মানুষ সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে সচেতন নয়।’
আম্বরখানা তুলনা ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারি সাইফ উদ্দিন জানান, ‘ব্যবসা একেবারেই খারাপ। আগের বছর এমন দিনে এক মিনিট বসে থাকার ফুরসত ছিলো না। আর এবার বসে বসে সময় পার করতে হচ্ছে। শুধু আমার নয়, অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে একই অবস্থা।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। আমাদের টিম মাঠে রয়েছে সারাক্ষণ। তবে মানুষের সামাজিক যে দায়বদ্ধতা রয়েছে সেটি মানুষকে পালন করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, আমি সচেতন থাকলে আমার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে।’